প্রতিনিধি ২৭ মে ২০২৫ , ৫:১২:৩৫ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি মজলুম জননেতা এটিএম আজহারুল ইসলামকে দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল করে আপিল বিভাগ তাঁকে খালাস দিয়েছেন। এই রায়ে ন্যায়বিচারের প্রতিফলন ঘটায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
আজ (২৭ মে) এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম এ সন্তোষ প্রকাশ করেন।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, “দিল্লির মদদপুষ্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও আধিপত্যবাদের গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিচারপ্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার যে প্রবণতা চালু করেছিল, আজকের রায়ের মাধ্যমে তা জাতির সামনে উন্মোচিত হলো। এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ, বিচার ও রায় সবকিছুতেই যে ন্যায়বিচারের নামে চরম অবিচার (Travesty of Justice) সংঘটিত হয়েছে তার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি মিলেছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, “২০১২ সালে ভিত্তিহীন অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ (ICT-1) ২০১৩ সালের ১২ নভেম্বর তাঁর বিরুদ্ধে ছয়টি অভিযোগ গঠন করে, যার মধ্যে পাঁচটি অভিযোগে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাঁকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে। এ রায়ের বিরুদ্ধে তিনি ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করেন। দীর্ঘ শুনানির পর ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর আপিল বিভাগ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে।
জনাব এটিএম আজহারুল ইসলামকে প্রহসনমূলক ও বানোয়াট সাক্ষ্যের ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়। যেখানে একজন সাক্ষী ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূর থেকেও নিজেকে প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করেন এবং অপরজন নিজেকে ভিকটিমের সহপাঠী বললেও ডকুমেন্ট অনুযায়ী তিনি ভিকটিম কলেজ ছাড়ার দুই বছর পর সেখানে ভর্তি হন। এমন মনগড়া কল্পকাহিনির ওপর ভিত্তি করে যথাযথ প্রমাণ ও যুক্তিসংগত বিশ্লেষণ ছাড়া যে রায় দেওয়া হয়েছিল, তা ছিল বিচারিক হত্যার শামিল।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, “সর্বোচ্চ আদালত আজকের রায়ে পূর্ববর্তী রায়ে উপস্থাপিত সাক্ষ্য ও প্রমাণ যথাযথভাবে বিশ্লেষণ করা হয়নি এবং তা ‘সত্যের বিকৃতি’ (Travesty of Truth) ও ‘ন্যায়বিচারের মারাত্মক ব্যর্থতা’ (Gross Miscarriage of Justice) হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এ রায়ের মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হলো—সত্যকে মিথ্যার আবরণে ঢেকে রাখা যায় না।
নেতৃবৃন্দ বলেন, “শুধু এটিএম আজহারুল ইসলাম নয়, ছাত্রশিবিরের প্রথম কেন্দ্রীয় সভাপতি শহীদ মীর কাশেম আলী ও দ্বিতীয় কেন্দ্রীয় সভাপতি শহীদ মুহাম্মাদ কামারুজ্জামানসহ অন্তত ছয়জন জাতীয় নেতৃবৃন্দকে একই পদ্ধতিতে অন্যায়ভাবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আরও পাঁচজনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারেই শহীদ করা হয়েছে। কথিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানা হয়নি ন্যায়বিচারের ন্যূনতম মানদণ্ড। বরং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় শাহবাগে তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চ কায়েম করে দেশপ্রেমিক নেতৃবৃন্দকে হত্যা করা হয়েছে। গণজাগরণ মঞ্চের চূড়ান্ত পরিণতি ছিল শাপলা চত্বরে নির্মম গণহত্যা। এইসব ঘটনার দায় কথিত শাহবাগীরা কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে রিভিউ বোর্ড গঠন করে পূর্ববর্তী সকল বিতর্কিত ও পক্ষপাতদুষ্ট রায় পুনর্বিবেচনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। পাশাপাশি তাঁরা শহীদ পরিবারগুলোকে যথাযথ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানান।