জাতীয়

কোন ভাবেই জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন নয়।। অনেক কুলাঙ্গার আছে নারায়ণগঞ্জকে অস্থির করতে চায়…মির্জা আব্বাস

  প্রতিনিধি ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ , ৪:০৮:৩৫ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক নারায়ণগঞ্জ:

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির মির্জা আব্বাস বলেছেন, কোনভাবেই জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন নয়।যারা আগে স্থানীয় নির্বাচনের কথা বলছেন, তাদের উদ্দেশ্য দুরভিসন্ধিমূলক, ষড়যন্ত্রমূলক। আমরা লড়াই সংগ্রাম করেছি জাতীয় নির্বাচনের জন্য। আগে কেনো স্থানীয় নির্বাচন এটি হলো যাদের গ্রামগঞ্জে পায়ের তলায় মাটি নেই, তাদের প্রতিষ্ঠিত করার পায়তারা।
মঙ্গলবার বিকেলে নগরীর মেট্রো হল সড়কে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, দ্রæত সময় জাতীয় সংসদ নির্বাচন, দেশের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমানোর দাবিতে নারায়ণগঞ্জ নবগঠিত জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা আব্বাস আরো বলেন, বিডিআর হত্যাযজ্ঞ প্রসঙ্গে মির্জা আব্বাস বলেন, এই হত্যার বিচারের নামে প্রহসন করা হয়েছে। বিনা অপরাধে প্রায় দেড়দশক সাধারণ সিপাহিদের আটক রাখা হয়েছে। সেদিন প্রশিক্ষিত একটি প্রাতিষ্ঠানিক গ্রæপ তাদের হত্যা করেছে। যাদের বিচার হয়েছে তারা নির্দোষ। জেলের ভিতর তাদের কান্না দেখে নিজের চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি। যারা শাহাদাত বরণ করেছে তাদের ফেরত আনতে পারব না। সত্যিকারের দোষীদের আড়াল করতেই নির্দোষদের ফাঁসানো হয়েছে। যারা বিনাদোষে আটক রয়েছে তাদের কেনো ছাড়া হচ্ছে না।

মির্জা আব্বাস বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহ। ছিনতাই খুন রাহাজানিতে অতিষ্ট দেশবাসী। কিন্তু কারা এগুলো করছে? কারা বলেছিল দিনের বেলায় চলতে না পারলে আমরা রাতে কাউকে চলতে দিব না। ভারতে বসে এদেশকে অস্থির করার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু এগুলো করে দেশের মানুষের ঐক্য ভাঙা যাবে না। দেশের মানুষকে শান্তিতে ঘুমাতে দিবেন না। এই সরকার যখন ক্ষমতায় আসে আমরা সমর্থন করেছিলাম। বলেছিলাম এই সরকার ব্যর্থ হলে দেশ ব্যর্থ হবে। তাই বলে আজীবন ক্ষমতায় থাকার ম্যান্ডেট কেউ আপনাদের দেয়নি।

মির্জা আব্বাস বলেন, কয়েকজন ভদ্রলোক আছেন, তারা বলেন- যারা নির্বাচন চান তারা দেশের ভালো চান না। কোথায় ছিলেন আপনারা। ১৭টি বছর আমরা জনগণকে সাথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। হাজার হাজার মানুষ শহীদ হয়েছে, গুম হয়েছে। আমরা নির্বাচন চাই ক্ষমতায় আসার জন্য নয়, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য।

বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, দ্রব্যমূল্য অসহনীয় হয়ে পড়েছে। সরকার সংস্কারের কথা বলছেন। হাতের কাছে যে সংস্কার আছে তা করছেন না কেনো? হাসিনার পতনের দুদিন আগে ব্যবসায়িক সিন্ডিকেটরা কে কি বলেছে। একজন বলেছে আপনার নির্দেশের বাইরে আমরা যাব না, আরেকজন বলেছে মৃত্যুর পরও আমরা আপনার সাথে আছি। সে সিন্ডিকেট কী ভেঙেছেন? যতদিন পর্যন্ত সে সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারবেন ততদিন দ্রব্যমূল্যসহ কিছুই নিয়ন্ত্রণে আসবে না।

বরং বর্তমান সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট অনেকে তাদের অফিসে গিয়েছেন। সেসব সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা আছে তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। কেউ কেউ বলছেন, নির্বাচনের কথা যারা বলে তারা জাতির শত্রæ। তাহলে বলে দেন বাংলাদেশে আর নির্বাচনের দরকার নেই। হাসিনা যেভাবে দেশ চালিয়েছে সেভাবেই চালান। দেখি পারেন কিনা।

নারায়ণগঞ্জের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এই নারায়ণগঞ্জে অনেক কুলাঙ্গার আছে। যারা আজকে ঘরে বসে আছে। যারা ঘরে বসে ভারতে সঙ্গে কথা বলে এই নারায়ণগঞ্জকে অস্থির করতে চায় তাদেরকেও গ্রেপ্তার করেছে না। এই সমস্ত দিকে নজর দেয়া উচিৎ।

জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদের সভাপতিত্বে এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন, কমিটির বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ঢাকা বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, বিএনপির সহ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, সাবেক মন্ত্রী অধ্যাপক রেজাউল করিম, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান, জেলা বিএনপির ১ম যুগ্ম আহবায়ক মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু, যুগ্ম আহবায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজিব, শরীফ আহমেদ টুটুল, সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু, জেলা যুবদলের আহবায়ক সাদেকুর রহমান সাদেক, সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি প্রমুখ। দিনের বেলা আমরা হাটতে না পারলে রাতের বেলা তাদের ঘুমাতে দিবো না।

ভারতে বসে বসে আওয়ামীলীগের এই দালাল চক্র, আওয়ামীলীগের তথাকথিত নেতৃবৃন্দ দেশকে লুট করেছে। এই দেশের মানুষকে খুন করেছে। এদেশে সন্ত্রাস করে ভারতে বসে আছে। বসে বসে চক্রান্ত করছে কিভাবে দেশকে অশান্ত করা যায়।
এখন এই দেশকে অশান্ত করেন আর যা-ই করেন, কিন্তু এই দেশের মানুষের মনের যে শক্তি, যে ঐক্য তা কখনো আপনারা ভাংতে পারবেন না। এই দেশের মানুষ শান্তি চায়। ভালোভাবে বাঁচতে চায়।
১৭ বছর আন্দোলন করেছি নির্বাচনের জন্য। জনগণ যাকে ভোট দিবে সেই সরকার গঠন করবে।
বিএনপি অত্যন্ত জনপ্রিয় দল। বিএনপির জনপ্রিয়তাকে ধংস করার জন্য এক শ্রেনির মানুষ মাঠে নেমেছে। তারা বিএনপির সুনামকে ধংস করতে চায়। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রওহমান বিদেশ থেকে বার বার বলেছে, হুশিয়ার করেছে দেশের এবং জাতির শৃংখলা বজায় রাখুন। কোন প্রকার অপকর্মে লিপ্ত হবেন না। অনেকেই আপনারা শুনছেন না। কিন্তু দলের বদনাম হচ্ছে। অপকর্ম করছে আরেকজন নাম হচ্ছে বিএনপির। এটা খেয়াল রাখতে হবে।
তিনি বলেন, দ্রব্য মূল্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে। দ্রব্যমূল্যের কারণে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। এটাকে সহনীয় পর্যায়ে আনতে হবে।
অন্তর্বর্তীনকালীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে মির্জা আব্বাস বলেন, আপনারা সংস্কার সংস্কার বলে কান ঝালাপালা করে দিয়েছেন আমাদের। সংস্কার কি করছেন আমি জানি না। কিন্তু হাতের কাছে যে সংস্কারটা আছে সেটা করছেন না কেন তা আমরা জানি না। আপনারা যারা সরকারে আছেন আনপাদের কি মনে নাই আগস্টের ৩ তারিখ বা ২ তারিখে এক শ্রেনির ব্যবসায়িদের নিয়ে শেখ হাসিনা যখন সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে সভা করেছিল। সেই সভায় কে কি বক্তব্য দিয়েছিল সেই রিপোর্ট খুলে দেখুন। আমি নাম বলতে পারি সবার। কিন্তু নাম বলছি না এই মুহুর্তে। কারণ শত্রæ বাড়াতে চাই না আর। যদিও শত্রুর অভাব নাই। ওই দিন একজন বলেছিল আমি আজীবন তোমার সঙ্গে থাকতে চাই। আরেকজন বলেছিল আপনার সঙ্গে আছি মৃত্যুর পরও আপনার সঙ্গে থাকবো। এই ধরনের কথাবার্তা যারা বলেছিল আপনারা কি সেই সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে পেরেছেন। সেই সিন্ডিকেট ভাঙ্গেন নাই। এই সিন্ডিকেট রয়ে গেছে। এই সিন্ডিকেটের কেউ গ্রেপ্তার হয় নাই।

এই সিন্ডিকেটের লোকজন লুটেয়া দলের সঙ্গে ছিল। এবং এখনো সিন্ডিকেট করে দ্রব্যমূলের দাম বাড়িয়ে রেখেছে। যতক্ষন পর্যন্ত আপনারা আগস্টের ৩ তারিখের মিটিংয়ে অংশ নেয়া সিন্ডিকেটের কে কি কথা বলেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিবেন ততক্ষন পর্যন্ত দ্রব্যমূল্যের দাম কমবে না। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি।

উপদেষ্টাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, তারা বলে নির্বাচন যারা চায় তারা জাতির শত্রæ। তাহলে বলে দেন বাংলদেশে আর নির্বাচনে প্রয়োজন নাই। যেমনি হাসিনা বলেছিল, করেছিল, ৪০ বছর ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন দেখেছিল। আপনারাও থাকেন। আমরা মানা করবো না। দেখি থাকতে পারেন কি না। কিন্তু গণতন্ত্রের জন্য এই দেশের মানুষ লড়াই করেছে। আমরা গণতন্ত্র চাই। আমরা ভোটের অধিকার চাই।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিষয়ে তিনি বলেন, গ্রামে গ্রামে দেখা যাচ্ছে অমুক ভাইকে চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চাই।

আরও খবর

Sponsered content