প্রতিনিধি ২৯ মে ২০২৫ , ১:৩৬:২৩ প্রিন্ট সংস্করণ
ওমর ফারুক রনি, মাধবদী, নরসিংদী:
নরসিংদীর মাধবদী এলাকার কাপড় ব্যবসায়ী মোরশেদ মিয়াকে গাজীপুরের পুবাইলের একটি রিসোর্টে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে তার প্রেমিকা বিথী আক্তার (২১) ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী কামরুন্নাহার বাদী হয়ে গাজীপুর আদালতে একটি হত্যা মামলা (সিআর মামলা নং ১২২/২৫) দায়ের করেছেন।
মামলার এজাহার ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ৬ মে (মঙ্গলবার) দুপুর আড়াইটার দিকে বিথী আক্তার, মোরশেদ মিয়া, তার বন্ধু আবুল ও একজন গাড়িচালক একটি প্রাইভেটকারে করে গাজীপুরের পুবাইল এলাকায় শাহীন ফিসারিজ রিসোর্টে ঘুরতে যান। রিসোর্টে একটি কক্ষ ভাড়া নেওয়ার পর বিথী কৌশলে আবুল ও ড্রাইভারকে খাবার আনার জন্য টাকা দিয়ে বাইরে পাঠিয়ে দেন।
অভিযোগ অনুযায়ী, সেই সুযোগে বিথী ড্রিংকসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ ও চেতনানাশক মিশিয়ে মোরশেদকে খাওয়ান। অজ্ঞান হওয়ার পর বিছানার চাদর দিয়ে তার হাত-পা বেঁধে ও ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরে মোরশেদের মরদেহ কাপড় দিয়ে ঢেকে দিয়ে রিসোর্ট ছাড়ার চেষ্টা করলে রিসোর্টের নিরাপত্তাকর্মীর সন্দেহ হয়। এরপর তিনি মোরশেদের বন্ধু ও ড্রাইভারকে খবর দেন। তারা এসে মোরশেদকে অচেতন অবস্থায় পেয়ে দ্রুত গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান, যেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের পরিবার জানায়, মরদেহ বাড়িতে এনে দাফনের পর মোরশেদের বন্ধু ও ড্রাইভারের কাছ থেকে বিস্তারিত শুনে কামরুন্নাহার আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় বিথী, তার মা নার্গিস বেগম (৪৩), বড় বোন এবং আরও অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, নিহত মোরশেদ ও আসামিরা একই এলাকার হওয়ায় তাদের মধ্যে পূর্বপরিচয় ছিল। সেই সুবাদে বিথীর সঙ্গে মোরশেদের পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিথী বিভিন্ন সময়ে মোরশেদের কাছ থেকে প্রায় ১২ লাখ টাকা ধার নেয়। ওই টাকায় বিথীর মা নার্গিস বেগমের নামে গাজীপুরের মহিষাসুরা ইউনিয়নের বালুচর গ্রামে জমি কিনে বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছিল, যার সমস্ত ব্যয় মোরশেদ বহন করেন। নির্মাণকাজ চলাকালে মোরশেদ নিজেই বাড়ির দেয়ালে পানি দিতেন এবং বিথী সেখানে উপস্থিত থাকতেন। প্রতিবেশীদের প্রশ্নের জবাবে নার্গিস বেগম মোরশেদকে ‘ধর্মপুত্র’ হিসেবে পরিচয় দিতেন।
সম্প্রতি পারিবারিক বিষয়ে বিথীর সঙ্গে মোরশেদের বিরোধ দেখা দেয় এবং তাদের সম্পর্কের বিষয়টি মোরশেদের স্ত্রী জানার পর ঘন ঘন ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে মোরশেদ নিজের দেওয়া টাকা ফেরত চাইলে বিথী ও তার পরিবার টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে এ হত্যাকাণ্ড ঘটায় বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
এজাহারে আরও অভিযোগ করা হয়েছে, হত্যার পর বিথী মোরশেদের পকেট থেকে মানিব্যাগ, নগদ ৮০ হাজার টাকা এবং একটি দামি স্মার্টফোন চুরি করে নিয়ে যান।
ঘটনাটি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন ও দোষীদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে ।
মোরশেদ মিয়া হচ্ছে মাধবদীর পুরাতন পত্রিকা ব্যাবসায়ী ইউনুস আলীর ছোট পুত্র।।