অপরাধ

পুলিশের সোর্স পরিচয় দিয়ে পুরো এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শিকদার সোনারগাঁয়ে তদন্ত ওসির নাম ভাঙ্গিয়ে তাফালিং

  প্রতিনিধি ১০ জুলাই ২০২৩ , ৬:১৫:৫৪ প্রিন্ট সংস্করণ

সোনারগাঁ প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে পুলিশের সোর্স পরিচয় দিয়ে পুরো সোনারগাঁ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন এক যুবক। কখনো সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক, কখনো ওসি তদন্ত, কখনো অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের আত্মীয়, কখনো নিজেকে আওয়ামীলীগের নেতা পরিচয় দিয়ে প্রভাব খাটায়, আবার কখনো নিজেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক দাবি করেন এই বহুরুপী শিকদার। স্থানীয়রা বলছেন এলাকায় পুলিশের সোর্সখ্যাত শিকদারকে বহুরুপি শিকদার হিসেবেই আখ্যায়িত দেন। প্রশাসনের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রতিনিয়তই এলাকায় বিভিন্নরকম অপরাধ করে বেড়াচ্ছেন। দ্রæত পুলিশের সোর্স শিকদারকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন সোনারগাঁবাসী।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে যায়, সোনারগাঁ থানা পুলিশ ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সার্কেল ‘খ’ এর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে হারিয়া এলাকার বাসিন্দা জামান মিয়ার ছেলে শিকদার মিয়া একের পর এক সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে বেড়াচ্ছেন। পিরোজপুর বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় মেট্রোইন নামে একটি আবাসিক হোটেলের মালিক জয় নামে এক ব্যক্তিকে ভাড়ায় ঠিক করে দেন শিকদার। অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করার কাজে সহযোগীতা করার জন্য প্রতিদিন তিন হাজার করে মাসে প্রায় এক লাখ টাকা হাতিয়ে নিতেন শিকদার। ভবন মালিকপক্ষ আবাসিক ব্যবসা বন্ধ করে হোটেলে তালা লাগিয়ে দেওয়ার পর থেকে হোটেল চালু করার জন্য বিভিন্নভাবে তদবির শুরু করেন শিকদার মিয়া।
পরবর্তীতে কোন অবস্থাতেই আবাসিক হোটেল চালু করতে না পেরে মালিক পক্ষের নামে নানামূখী অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এ বিষয়ে প্রশাসন নিরপেক্ষ তদন্ত করলেই সত্যতা বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন সচেতন মহল। সে বিগত বিশ বছর যাবৎ থানা পুলিশের সোর্স পরিচয় দিয়ে পুরো সোনারগাঁ এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। থানায় কোন ব্যক্তির নামে অভিযোগ, মারামারির ঘটনাসহ কোন ঘটনা ঘটলেই এগিয়ে আসেন শিকদার। তিনি থানার ওসি, তদন্ত ওসিসহ সকল উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দিয়ে কাজ করিয়ে দেওয়ার নাম করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। শুধু তাই নয়, আসামী গ্রেফতার ও ছাড়িয়ে দেওয়ার নাম করেও হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা। নিজের প্রভাব বিস্তার করার জন্য নিজেকে সোনারগাঁ উপজেলা শেখ রাসেল শিশু কিশোর পরিষদের নেতা বলে পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, তিনি এমপি মন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়েও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করছেন বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। শিকদার একাধিক বিয়ে করেও ক্ষ্যান্ত হননি। মেট্রোইন হোটেলেও সবসময় সুন্দরী মেয়েদের নিয়ে সময় যাপন করতেন বলে জানিয়েছেন হোটেল মালিক জয়।
তার সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন টিপরদী এলাকার এসিআই কারখানা সংলগ্ন টিটু মিয়া। টিটু মিয়া নিজেকে সোনারগাঁ থানা তদন্ত ওসির কাছের লোক পরিচয় দিয়ে এলাকায় বিভিন্ন অপকর্ম চালাচ্ছেন বলেও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। সোনারগাঁ পৌরসভার দীঘিরপাড় গ্রামের বাসিন্দা আক্কাস আলীর ছেলে সুজন মিয়া নামে এক ব্যক্তি এসকল অপকর্মের সেল্টার দিচ্ছেন বলেও জানা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, জামানের ছেলে শিকদার, আক্কাস আলীর ছেলে টিটুসহ কয়েকজন ব্যক্তি সোনারগাঁ থানায় তদন্ত ওসির কক্ষে সবসময় খোশগল্পে মগ্ন থাকেন। সাধারণ ভুক্তভোগীরাও থানায় গিয়ে তদন্ত ওসির সাথে নিজেদের সমস্যার কথা বলতে পারেন না। এক প্রকার সবকিছু তাদের দিয়েই নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন তদন্ত ওসি। এটা সাড়া এলাকায় চাউর রয়েছে।
ভাটিবন্দর এলাকার এক বাসিন্দা এই প্রতিবেদককে জানান, শিকদার ও টিটু মিয়াদের আর কোন কাজ নেই। তারা থানায় সকালে ঢুকে রাত পর্যন্ত দালালী করে। সাধারণ মানুষ তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। আমরা এই জিম্মিশালা থেকে মুক্তি চাই। অবিলম্বে থানা থেকে এসকল সোর্সদের বিতারিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য জোড় দাবি জানাই।
অভিযোগে বিষয়ে জানতে চাইলে সোনারগাঁ থানার অফিসার্স (ওসি তদন্ত) আহসান উল্লাহ এই প্রতিবেদককে জানান, আমার কক্ষ সকলের জন্য উন্মুক্ত যে যখন আসে আসতে পারে। তবে আমার নাম ব্যবহার করে কেউ কোন অপকর্ম করলে অবশ্যই এর দায়ভার আমি নিবো না। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নুরে আলম সোয়েব মোল্লা এই প্রতিবেদককে জানান, আমার কাছ থেকে প্রতারণা করে শিকদারের মাধ্যমে হোটেল ভাড়া নেন জয় নামে এক ব্যক্তি। পরে যখন জানতে পারলাম এই হোটেলে বিভিন্ন মেয়েদের দিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ চালানো হচ্ছে। এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে হোটেলটি তালাবদ্ধ করে বন্ধ করে দেই। হোটেল চালাতে গিয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করবে বলে প্রতিদিন তিন হাজার করে টাকা চাঁদা আদায় করতো শিকদার মিয়া। আমি হোটেলটি বন্ধ করে দেওয়ার পরও শিকদার হোটেলটি চালু করার জন্য বিভিন্নভাবে আমার কাছে তদবীর চালিয়েছে। আমি রাজী না হওয়ায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রাচার চালাচ্ছে। আমার মরহুম বাবা আলহাজ¦ তাজুল ইসলাম মোল্লা ইউনিয়ন পরিষদ, মসজিদ,মাদ্রাসা, ঈদগাঁহসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানে জমি দান করেছেন। আমি বর্তমানে আমেনা সুপার মসজিদ মার্কেটের সভাপতি,পিরোজপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের সাধারণ সম্পাদক, পিরোজপুর জণকল্যাণ সংসদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। এলাকায় গরীব, অসহায় মানুষের সেবায় সবসময় নিজেকে নিয়োজিত রাখছি। আমার ব্যক্তিগত সামাজিক সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য আমি মানহানী মামলা দেওয়ার প্রস্তুতি গ্রহন করছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিকদার মিয়ার মুঠোফোনে কয়েকবার কল করা হলেও তাকে পাওয়া যায় নি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল জানান, পুলিশের সোর্স পরিচয়ে কোন অবস্থাতেই পুলিশের সুনামক্ষুন্ন করলে কাউকে কোন ভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। শিকদার, টিটুর বিষয়ে ইতিমধ্যেই খোজখবর নেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

আরও খবর

Sponsered content