সম্পাদকীয়

মার্কেট নির্মাণ বন্ধ করুন

  প্রতিনিধি ৯ জুলাই ২০২৩ , ৪:৪১:১৫ প্রিন্ট সংস্করণ

আমরা প্রতিনিয়ত নানাভাবে আমাদের প্রকৃতি ও পরিবেশ ধ্বংস করে চলেছি। সেটি যেমন পাহাড় কেটে, বন উজাড় করে কিংবা ইটভাটায় কাঠ পুড়িয়ে করছি, তেমনি নদী, পুকুর, জলাশয় দখল, দূষণ, ভরাট ও স্থাপনা তৈরি করে করছি। কালের কণ্ঠে গতকাল প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, এক বছরের বেশি সময় ধরে থেমে থেমে সুখানদীঘির একাংশ ভরাট করছে প্রভাবশালী মহল। রাজশাহী মহানগরে ৯৯টি পুকুর ভরাটের ব্যাপারে উচ্চ আদালতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।এই তালিকায় আছে সপুরা এলাকার সুখানদীঘি নামের বড় পুকুর বা দিঘিটি। অন্যদিকে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আইন অনুযায়ী কোনো জলাশয় ভরাট করে সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। কিন্তু এক বছরের বেশি সময় ধরে থেমে থেমে দিঘিটি ভরাট করা হচ্ছে। এতে দিঘিটি অস্তিত্ব হারানোর হুমকিতে পড়েছে।

এই আত্মঘাতী কাজ শুধু যে রাজশাহীতে হচ্ছে, তা নয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের কাজ চলছে। বিদ্যমান আইনে পুকুর ভরাট নিষিদ্ধ থাকায় পুকুর বা জলাশয় ভরাট করার আগে দখলদাররা একটি কৌশলও অবলম্বন করে। পুকুরগুলো ময়লা ফেলার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।আশপাশের সবাই সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলে। সেই সঙ্গে কিছু মাটিও ফেলা হয়। এভাবে কয়েক মাসের মধ্যে পুকুরের একটি বড় অংশ ভরাট হয়ে যায়।

একেকটি পুকুরে শুধু মাছ নয়, অসংখ্য ছোট-বড় জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ থাকে। পুকুরের প্রাকৃতিক পরিবেশে জন্ম নেওয়া অনেক প্রাণী ও উদ্ভিদ নদী বা প্রবহমান জলাশয়ে বাঁচতে পারে না।তাই পুকুর না থাকলে এসব প্রাণী ও উদ্ভিদ হারিয়ে যাবে। শহরাঞ্চলে গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানি তুলে সরবরাহ করা হয়। বৃষ্টির পানি আবার ভূগর্ভে প্রবেশ করতে না পারলে ভূগর্ভের পানির স্তর ক্রমেই নিচে নেমে যায়। এরও বড় কারণ নদী শুকিয়ে যাওয়া এবং পুকুর-জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়া। এসব কারণে আইন করে রাষ্ট্রীয় বা ব্যক্তিমালিকানাধীন সব ধরনের পুকুর বা জলাধার ভরাট নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু সেই আইনের বাস্তবায়ন কোথায়? শহরাঞ্চলে পুকুর, জলাধার সংরক্ষণের দায়িত্ব মূলত সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার ও পরিবেশ অধিদপ্তরের। এসব সংস্থা কি তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে? করছে না। তার একটি প্রমাণ বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা সদরের রায়েন্দা পুকুর। প্রায় শতবর্ষী পুকুরটি যত্ন করে সংরক্ষণ করার কথা। কিন্তু জেলা পরিষদ পুকুরের একাংশ ভরাট করে মার্কেট নির্মাণের জন্য প্রভাবশালীদের কাছে ইজারা দিয়েছে। পুকুরের একাংশ ভরাট করে মার্কেট নির্মাণ করেছে।

দেশে নদী, খাল, পুকুর, জলাশয় দখল ও ভরাটের হিড়িক লেগেছে। যে যেভাবে পারছে দখল করছে, ভরাট করছে, স্থাপনা নির্মাণ করছে। প্রশাসনের উপযুক্ত পদক্ষেপের অভাবে সেসব আত্মঘাতী প্রক্রিয়া বন্ধ হচ্ছে না। আইনে সরকারি বা ব্যক্তিগত কোনো পুকুর ভরাট করা নিষিদ্ধ। কিন্তু সে আইনের প্রয়োগ কোথায়? সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও দপ্তরগুলো এসব ব্যাপারে প্রায় নির্বিকার।

আমরা মনে করি, রাজশাহীর সুখানদীঘি সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি। রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।