সারাদেশ

মুন্সিগঞ্জে বিকল্প সড়কের ব্যবস্থা না করে সেতু নির্মাণে ভোগান্তি

  প্রতিনিধি ২৪ মার্চ ২০২৪ , ৭:১৬:৪৩ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে ভারী যানবাহন চলাচলে বিকল্প কোন সড়কের ব্যবস্থা না করে সড়ক ও নদীপথ বন্ধ করে নির্মাণ করা হচ্ছে সেতু।এতে চলাচলে ভোগান্তিতে পড়ছে স্কুল-মাদ্রাসা শিক্ষার্থী, কৃষক, ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবি ও স্থানীয় কয়েক লাখ মানুষ।

উপজেলার নওপাড়ায় কুসুমপুর-মালিরঅংক সড়কের পোড়া গংগা খালের উপর পুরাতন স্টিলের বেইলি সেতু ভেঙে নতুন কংক্রিটের সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নায়েব আলী কনস্ট্রাকশন, আর এতে তারা বিকল্প সড়ক না রাখায় বিপাকে পড়েছেন এলাকাবাসী।

বিশেষ করে, আলু উত্তোলন মৌসুম শুরু হওয়ায় স্থানীয় দুইটি উপজেলার কয়েক হাজার কৃষকের ভোগান্তি চরমে।

সেতুর প্রকল্পে বিকল্প সড়ক না রাখার বিষয়ে এলজিইডিকে দায়ী করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আর এলজিইডি বলছে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধির পরামর্শে বিকল্প সড়ক রাখা হয়নি। কিন্তু অভিযোগকে মিথ্যা বলেছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ৪ কোটি এক লাখ ৬৮ হাজার টাকা ব্যয়ে নওপাড়া কুসুমপুর সড়কের পোড়া গংগা খালের উপর ৪৬ মিটার দৈর্ঘ্যের আরসিসি গার্ডার সেতুর নির্মাণ কাজ পায় নায়েব আলী কনস্ট্রাকশন নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।গেল বছরের নভেম্বরে কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বুধবার সরেজমিন প্রকল্প এলাকায় গিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা যায়- পাঁচ মাস বিলম্বে চলতি মাসে শুরু হয়েছে প্রকল্পের কাজ। যা শেষ হওয়ার কথা আগামী বছরের মার্চে।

এসময় দেখা যায়, পুরাতন স্টিলের বেইলি সেতু ভেঙে নতুন নির্মানাধীন সেতু এলাকায় খাল বন্ধ করে দড়ি টেনে পাইলিং বসানোর কাজ চলছে। সামান্য মাটি কেটে খালের পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হলেও তা একেবারেই অপর্যাপ্ত। খাল দিয়ে নৌকা বা ট্রলার চলাচলের স্বাভাবিক কোন পরিস্থিতি নেই। মানুষের চলাচলের জন্য পাশে বাঁশের অস্থায়ী সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু বিকল্প কোন সড়ক না থাকায় এবং নদীপথটিও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভারি যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সড়কটি দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় ২-৩ কিলোমিটার এলাকা ঘুরে কাজীর বাগ সড়ক হয়ে পণ্য পরিবহন করতে হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দুইটি উপজেলার প্রায় এক লাখ মানুষের। সিরাজদিখানের কুসুমপুর, ইছাপুরা, খিলগাও ও পাশের উপজেলা শ্রীনগরের কুড়ারবাগ, পানিয়া তন্তুরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতি বছর আলু উত্তোলন মৌসুমে ২-৩ লাখ বস্তা আলু নওপাড়া এলাকার বিভিন্ন কোল্ডস্টোরেজে পরিবহন হয়। সড়কটি বন্ধ থাকায় এসব এলাকার উত্তোলিত আলু পরিবহনে খরচ বেড়েছে কৃষকের। এছাড়া বিভিন্ন ব্যবসায়ীক পণ্য পরিবহনেও দেখা দিয়েছে ভ
চরম ভোগান্তি।

স্থানীয় আলু চাষী আব্দুর রব বেপারি বলেন, আগে যেখানে এক বস্তা আলু ক্ষেত থেকে নওপাড়ার কোল্ডস্টোরেজগুলোতে পরিবহনে ৩০ টাকা লাগতো এখন সেখানে নওপাড়া-কুসুমপুর সড়কটি বন্ধ থাকায় বিকল্প পথ ঘুরে আসতে প্রতি বস্তায় ২০ টাকা খরচ বেড়েছে। আশপাশে আর কোন কোল্ডস্টোরেজ না থাকায় কৃষকের বাধ্য হয়ে এই বাড়তি খরচ বহন করতে হচ্ছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আলমগীর খান বলেন, ঢাকা থেকে বিভিন্ন পণ্য আনা-নেয়ার জন্য স্থানীয় দোকানদাররা এই সড়কটি ব্যবহার করে থাকেন। এখানে রড-সিমেন্ট, টিনসহ বিভিন্ন ভারি পণ্যের দোকান-প্রতিষ্ঠান রয়েছে।গত একমাস সড়কটি পুরোপুরি বন্ধ থাকায় সকলেই ভোগান্তিতে পড়েছেন। অনেক এলাকা ঘুরে পণ্য আনা-নেয়া করতে হচ্ছে সেতুর উত্তর প্রান্তের মালিরঅংক এলাকায়।

নওপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী গকুল দত্ত ডেনিস বলেন, দেশের ছোট-খাটো যেকোন সেতু নির্মাণের সময় বিকল্প সড়ক নির্মাণ করে তারপর কাজ করা হয় কিন্তু এই পথটিতে এত মানুষের চলাচল সত্ত্বেও কেন বিকল্প সড়ক রাখা হলো না তা বোধগম্য নয়।

নওপাড়া কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার এনামুল কবির লিটন বলেন, নওপাড়া বাজারের দক্ষিণ পাশের ১০-১৫টি এলাকা থেকে স্থানীয় কোল্ডস্টোরেজগুলোতে এই মৌসুমে ২-৩ লাখ বস্তা আলু আসে। কিন্তু এবছর সড়কটি বন্ধ থাকায় আলু তেমন আসছে না। কৃষকরা বেশি টাকা খরচ করে দূরদুরান্তের কোল্ডস্টোরেজে আলু নিয়ে যাচ্ছে। এতে তাদের পরিবহন খরচ বাড়ায় লাভের পরিমাণ কমে যাচ্ছে।

উদয় কোল্ডস্টোরেজের ম্যানেজার শাহিন বলেন বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা না করে এবং দুটি গুরুত্বপূর্ণ কোল্ডস্টোরেজের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ না করে সেতু ভেঙে ফেলায় কৃষকদের হাজার হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।

বিকল্প সড়কের ব্যবস্থা না করে সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করার বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নায়েব আলী কন্সট্রাকশনের সাইট ইঞ্জিনিয়ার মো. ফয়সাল আহমেদ খান বলেন, ‘এলজিইডি থেকে আমাদের যে ডিজাইন সরবরাহ করা হয়েছে সেখানে বিকল্প সড়কের ব্যবস্থা নেই।’ কাজ দেরিতে শুরু হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, স্থানীয়দের অনুরোধ ও বেশ কিছু বিদ্যুৎয়ের খুঁটি থাকায় কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। তবে নির্ধারিত সময়ের আগে কাজ শেষ করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। এ নিয়ে আমাদের কোন গাফিলতি নেই।’

এলজিইডির লৌহজং উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইয়াসিন আহমেদ বলেন, ‘প্রকল্পটি গ্রহণ করার সময় উপজেলা মিটিংয়ে আমরা বিকল্প সড়কের প্রস্তাবনা রেখেছিলাম। কিন্তু স্থানীয় বৌলতলী ইউপি চেয়ারম্যানের আপত্তির কারণে বিকল্প সড়ক রাখা হয়নি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৌলতলী ইউপি চেয়ারম্যান আ. মালেক সিকদার বলেন, ‘সেতুর কাজ কিভাবে করবে না করবে সেটা এলজিইডির ব্যাপার। আমি এই সিদ্ধান্ত দেয়ার কেউ না। তাছাড়া, আমি কোন মিটিংয়েও এ কথা বলিনি। তারা কিসের ভিত্তিতে আমার কথা বললো আমি জানি না। আমি শুনেছি তারাই বিকল্প সড়ক না করতে বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে কাজটি শুরু করেছে।’

আরও খবর

Sponsered content