ঘুষ, অনিয়ম, দুর্নীতিসহ নানা অপকর্মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এনফোর্সমেন্ট টিম বুধবার সারাদেশে একযোগে ৩৫টি সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে। অভিযানে অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ পাওয় গেছে বলে জানিয়েছেন দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন। বুধবার এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।

ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, কোথাও কোথাও দুদকের অভিযোনের খবর শুনে সাব-রেজিস্ট্রাররা পালিয়েছেন। টিমের সদস্যরা শিগগির তাদের প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেবেন। পরে কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিভিন্ন জায়গায় অভিযানের পর দুদক মহাপরিচালক ব্রিফিংয়ে যেসব তথ্য জানিয়েছেন তা তুলে ধরা হলো-
দিনাজপুরে হাতেনাতে টাকা উদ্ধার: দিনাজপুরের চিরিরবন্দর সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে অভিযানের সময় একজন নকলনবিশের কাছ থেকে ২৪ হাজার টাকা এবং একজন অফিস সহকারীর কাছ থেকে সাড়ে ১১ হাজার টাকা হাতেনাতে উদ্ধার করা হয়। ওই টাকার বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে না পারায় নকলনবিশকে সাময়িক বরখাস্ত এবং অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জেলা রেজিস্ট্রার টিমকে আশ্বস্ত করা হয়েছে।
কুষ্টিয়ায় নাইট গার্ডের কাছে ৪০ হাজার টাকা: কুষ্টিয়ার খোকসা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের নাইট গার্ডের কাছে ৪০ হাজার টাকা পাওয়া যায়। এর সন্তোষজনক ব্যাখ্যা তিনি দিতে পারেননি। এছাড়া অফিস কার্যক্রমে অনিয়ম ও অসঙ্গতির সত্যতা পাওয়া গেছে।
কোটালীপাড়ায় রশিদ বইয়ে গড়মিল: গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে সরকার নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত অর্থ আদায়, ৫২ (খ) রশিদ বইতে গড়মিল এবং মোহরাদের দ্বারা দলিল প্রতি ১ হাজার ৯ শ’ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায়ের প্রমাণ পাওয়া যায়।
গোয়াইনঘাটে প্রতি ধাপে ঘুষ লেনদেনের তথ্য সেবাগ্রহীতাদের সাক্ষ্যে: সিলেটের গোয়াইনঘাট সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে আবাসিক ভূমি রেজিস্ট্রেশন, নকল উত্তোলনসহ প্রতিটি ধাপে ঘুষ লেনদেনের তথ্য সেবাগ্রহীতাদের সাক্ষ্যে উঠে আসে। একজন ভুক্তভোগী জানান, একটি দলিল সম্পন্ন করতে তাঁকে ৪০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে।
টেবিল থেকে পাওয়া টাকার উৎস জানাতে পারেননি অফিস সহকারী: যশোর সদর সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে এক অফিস সহকারীর টেবিল থেকে ৫ হাজার ১শ টাকা উদ্ধার করা হয়। এর উৎস সম্পর্কে বলতে পারেননি তিনি।
খুলনায় রেকর্ডপত্রে অসঙ্গতি: খুলনা সদর সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে ছদ্মবেশে অভিযান চালিয়ে ঘুষ গ্রহণ, অতিরিক্ত অর্থ আদায়, রেকর্ডপত্রে অসঙ্গতি এবং দালালদের অপতৎপরতা দেখা যায়।
গৌরীপুরে হাতেনাতে ধরা উমেদার: ময়মনসিংহের গৌরীপুর সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে একজন উমেদার সরকারের নির্ধারিত ফি’র অতিরিক্ত অর্থ দাবি করার সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন।
চট্টগ্রামে অনিয়মের প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে: চট্টগ্রাম জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের সাবেক অফিস সহকারীকে অনুমোদন ছাড়া বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাখ্যান এবং ১৯ নকলনবিশ নিয়োগে অনিয়মের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে।
ঠাকুরগাঁওয়ে নকল পেতে অতিরিক্ত ফি আদায়: ঠাকুরগাঁওয়ের লাহিড়ী সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে বায়না ও কবলা দলিল সম্পাদনে অনিয়ম এবং নকল পেতে অতিরিক্ত ফি আদায় করা হয়।
বরিশালে সাব-রেজিস্ট্রার অফিস ছেড়ে পালালেন: বরিশাল সদর সাব রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে চর বদনা মৌজায় নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও দলিল সম্পাদন করা হয়ে। অভিযানের কথা শুনে এ সাব রেজিস্ট্রার অফিস ছেড়ে পালিয়েছিলেন।
কালিহাতীতে অতিরিক্ত অর্থ আদায়: টাঙ্গাইলের কালিহাতীর সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে সাবেক সাব রেজিস্ট্রার অতিরিক্ত অর্থ আদায় করতেন।
শরীয়তপুরে রাজস্ব ক্ষতি: শরীয়তপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে জমির শ্রেণি পরিবর্তনের মাধ্যমে দলিল রেজিস্ট্রেশন করে ৩৮ লাখ ৮৩ হাজার ৫০৫ টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে।
এছাড়া লক্ষ্মীপুরের রায়পুর, জামালপুরের সরিষাবাড়ি, বগুড়ার কাহালু, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ, ঝালকাঠির রাজাপুর, চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট, কিশোরগঞ্জের ইটনা, গাজীপুর সদর, কুমিল্লার নাঙ্গলকোট, টাঙ্গাইলের কালিহাতী, নওগাঁ সদর, পাবনা সদর, নারায়ণগঞ্জ সদর, নোয়াখালী সদর, রাজশাহীর গোদাগাড়ী, রংপুরের গঙ্গাচড়া, ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী, পটুয়াখালীর বাউফল এবং ঢাকার মিরপুরে সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে এ অভিযান চালান হয়। সরকার নির্ধারিত ফি’র অতিরিক্ত অর্থ আদায়, হয়ারানি, দালাল চক্রের সক্রিয়তা এবং রেকর্ডপত্রে অসঙ্গতির প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়।