সারাদেশ

শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপর অনিয়ম ও দীর্ঘকালীন বৈষ্যম্য নিয়ে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্লেলন

  প্রতিনিধি ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৮:৩১:৪৬ প্রিন্ট সংস্করণ

রাসেল খান : আজ ১২ সেপ্টেম্বর ২৪ বেলা ১২টা সময় মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলনে করেন, বৈষ্যম্য বিরোধী সংস্কার কমিটি শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট মাতুয়াইল, ঢাকা। আহবায়ক ডা: মজিবর রহমান, ডা: আহসানুল হক সহ সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এ সময় ডা: মজিবুর রহমান সহ লিখিত বক্তব্যতে বলেন, বিগত ১৬ বছর যাবৎ পতিত স্বেরাচার যে অন্যায় ও অত্যাচার চালিয়ে গেছে তারই অংশ হিসেবে শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটেও পতিত সরকারের মদদপুষ্ট চিকিৎসক সমাজের একটি চাটুকারী অংশ স্বাচিপ নামে সাধারন চিকিৎসক, নার্সসহ সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপর অনিয়ম ও দীর্ঘকালীন বৈষ্যম্যমূলক অপশাসন অব্যাহত রেখেছিল। ডা: মজিবুর রহমান বলেন, সকল সাংবাদিক ভাইদের দৃষ্টি আকর্ষণপূর্বক জানাচ্ছি যে, গত ৫ই আগষ্ট দীর্ঘ একমাসের ছাত্র জনতার রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর থেকেই স্বাচিপ চিকিৎসকদের অসহযোগীতা ও ক্রমাগত অনুপস্থিতি ও দূরভীসন্ধীমূলক আচরণের কারণে অত্র হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, শিশু- মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালকের পদটি শুন্য থাকায় কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি ও হাসপাতালের আর্থিক লেনদেন নির্বাহ করা যাচ্ছে না। এমতাবস্থায় বর্তমান চলমান অচলাবস্থা নিরসনে আপনাদের মাধ্যমে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সদয় বিবেচনার জন্য শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অব্যবস্থাপনার বিস্তারিত নিম্নে উপস্থাপন করা হচ্ছে: তিনি বলেন, ছাত্র জনতার এক মাসের রক্তাক্ত গন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর থেকে অদ্যাবধি অত্র অঞ্চলের এই বিশেষায়িত হাসপাতালটিতে বহুকষ্টে গুটিকয়েক ডাক্তারের নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রাখা হয়েছে। উল্লেখ্য, সরকার পতনের পর থেকে অদ্যাবধি অত্র প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক: যুগ্ম-পরিচালক সহ অনেক চিকিৎসকের অনুপস্থিতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। স্বৈরাচারের মদদপুষ্ট চিকিৎসকদের একটি অংশ স্বাচিপ নামে দলবাজির রাজনীতি চালু করেছিল যার পরিপ্রেক্ষিতে এখানে চিকিৎসা ব্যবস্থা ও একাডেমিক কার্যক্রম ভেঙ্গে পড়েছিল। স্বৈরাচারের দোষরদের অনুপস্থিতিতে আমরা কিছু সংখ্যক চিকিৎসক বর্তমান চিকিৎসা ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান যা একটি বোর্ড অব গভর্নরস দ্বারা পরিচালিত। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী বোর্ড অব গভর্নরসের চেয়ারম্যান। বিগত ১৬ বৎসরে অত্র ইনস্টিটিউটে আওয়ামী মদদপুষ্ঠ চিকিৎসক সমাজ স্বাচীপ নামে একচ্ছত্র অপশাসন চালিয়ে এসেছে। প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালকের কার্যালয়টি মূলত স্বাচিপের কার্যালয় হিসেবে পরিচালিত হয়েছে। আওয়ামী সমর্থনপুষ্ট চিকিৎসকরা স্বাস্থ্য সেবা বাদ দিয়ে সার্বক্ষণিক দলবাজিতেই থাকতেন। যার ফলোশ্রতিতে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেংগে পড়ে। তিনি আরো বলেন, বিগত ২০১১ সালে আওয়ামী সমর্থনপুষ্ট স্বাচিপ চিকিৎসকদের নির্দেশনায় ১৩জন চিকিৎসককে (যারা আওয়ামীলীগ সমর্থিত নয়) চাকুরী স্থায়ী করার পরিবর্তে কোন রূপ কারন দর্শানো ছাড়াই চাকুরীচুৎ করা হয়েছিল। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিবেচনায় এই বৈষ্যম্যমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছিল। ২০০৯ এর পূর্বে নিয়োগ প্রাপ্ত ৬২জন কর্মচারীকে (আওয়ামী সরকারের আমলে নিয়োগ না হওয়ায়) চাকুরীচ্যুত করার পদক্ষেপ নিলে উক্ত কর্মচারীবৃন্দ মামলার আশ্রয় নিয়ে চাকুরী টিকিয়ে রেখেছেন। মহামান্য হাইকোর্টের রায় পাওয়ার পরও তালিম না করে আপীলের মাধ্যমে বিচারালয়কে প্রভাবিত করে চাকুরীকে হুমকির মধ্যে রাখা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিবাদি সরকারের পতনের পর নিজেদের কৃতকর্মের কারণে আত্মউপলদ্ধিজনিত ভয় থেকে প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক, পরিচালক এবং যুগ্ম-পরিচালক দায়িত্ব থেকে অব্যহতি নেন। এমতাবস্থায় আয়ন ব্যয়ন কর্মকর্তা না থাকায় আর্থিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বেতন ভাতাদী সহ যাবতীয় আর্থিক লেনদেন করা সম্ভব হচ্ছে না। বিগত ১৬ বৎসরে যোগ্যতা সম্পন্ন অনেক চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পদোন্নতি না দিয়ে দলীয় বিবেচনায় অনেক জুনিয়রকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। ক্ষেত্র বিশেষে বোর্ড সভার সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করা হয়েছে। বৈষম্যের এই প্রক্রিয়ার প্রতিকার করার জন্য বৈষম্যবিরোধী আদর্শের একজন নির্বাহী পরিচালক নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন। সাবেক নির্বাহী পরিচালক কর্তৃক আওয়ামী সমর্থিত কর্মচারীদেরকে অতিরিক্ত দায়িত্বের নামে সরকারী অর্থ থেকে মাসিক মাসোহারা দেয়া হতো। কোন প্রকার দায়িত্বপালন না করে শুধুমাত্র সরকারী দলের মোসাহেবী করে বেতনের পাশাপাশি মাসিক বাড়তি এই মাসোহারা দেয়া হতো যা আর্থিক নীতিমালার পরিপন্থী। বাড়তি আয় করা সম্ভব এমন সকল জায়গায় নিজেদের দলীয় লোকদের পোষ্টিং দেয়া হয়েছে। ডা মান্নান তাঁর নিজের ভাইকে নিজ পদ থেকে ট্রেনিং সহ একাধিক উচ্চতর পদে দায়িত্ব দিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানের বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ সহ ট্রেনিং সংক্রান্ত যাবতীয় কেনাকাটার দায়িত্ব প্রদান করেন। কোন প্রকার ক্রয় নীতিমালা অনুসরণ না করেই নিজের ইচ্ছেমত প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত যাবতীয় কেনাকাটা সম্পন্ন করেছেন। তদন্ত স্বাপেক্ষে আইসিএমএইচ এর প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য নির্ধারিত ক্যাফেটেরীয়া এবং প্রতিষ্ঠানের টেন্ডার/ক্রয় প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও দূনীর্তির অনেক চিত্র বের হয়ে আসবে। এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণপূর্বক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
বর্ণিতাবস্থায় আমরা লক্ষ্য করছি যে ইতোমধ্যে কোন প্রকার যাচাই বাছাই ছাড়াই স্বাচিব সমর্থিত একজনকে শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে পদায়ন করা হয়েছিল যা অনভিপ্রেত এবং বিব্রতকর। বিগত ১৬ বৎসরের অনিয়ম ও দূনীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতি থেকে মুক্ত হয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা নিশ্চিত করার জন্য বৈষম্যবিরোধী আদর্শের একজন নির্বাহী পরিচালককে শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে পদায়ন না করলে গণঅভ্যূত্থানের মাধ্যমে ছাত্রজনতার এই আত্মত্যাগ অত্র প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। আমরা মনে করি, একজন নির্বাহী পরিচালককে পদায়ন করার পূর্বে অত্র ইনস্টিটিউট এর বৈষ্যম্য বিরোধী আদর্শে বিশ্বাসী চিকিৎসক কর্মকর্তা/কর্মচারীর মতামতকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা সমীচীন। এখানে উল্লেখ্য যে, গত ০৯/০৯/২৪ অত্র প্রতিষ্ঠানের শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ দেলোয়ার হোসেন আমাদেরকে ইবনে সিনা হাসপাতাল, দয়াগঞ্জ শাখায় চা খাওয়ার দাওয়াত দিলে আমি ডাঃ মজিবুর রহামান, ডাঃ মোহাম্মদ শাহীনূর করিম, ডা: আহসানুল হক এবং ডাঃ তাজুল ইসলাম বিকাল ৫ টায় ঘটিকার সময় ইবনে সিনা হাসপাতালে যাই। আমরা ইবনে সিনা হাসপাতালে প্রবেশ করার পরপরই ডাঃ দেলোয়ার হোসেন তাঁর নিজের ভাই ডা: সাইফুল ও ছেলের নির্দেশনায় কতিপয় ব্যাক্তি আমাদের উপর সন্ত্রাসী চালায়। আমি ডা: মজিবুর রহমান অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যাই। এখানেই শেষ নয় পরের দিন একই সন্ত্রাসীরা ছাত্র নামের পরিচয় দিয়ে শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, মাতুয়াইলে এসে পুণরায় কর্মকর্তা/কর্মচারীদের ভীতি প্রদর্শণ শুরু করে। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও ভীতি প্রদর্শনের মাত্রা সহ্যের সীমা অতিক্রম করলে এক পর্যায়ে তারা এলাকার মানুষের প্রতিরোধের মুখে পরে এবং একপর্যায়ে তারা পালিয়ে যায়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা/মাননীয় সচিব অথবা মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত কোন প্রতিনিধির মাধ্যমে অত্র ইনস্টিটিউট সরেজমীনে পরিদর্শণপূর্বক অথবা অত্র প্রতিষ্ঠানের বৈষ্যম্য বিরোধী চিকিৎসক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে স্বাক্ষাতের ব্যবস্থা গ্রহণ করে নির্বাহী পরিচালক পদায়নের অনুরোধ করছি, অন্যথায় আগামি ১৫/০৯/২৪ রবিবার সকাল ৯.০০ ঘটিকা থেকে ১০.০০ ঘটিকা পর্যন্ত প্রতিদিন কর্মবিরতি (জরুরী স্বাস্থ্য সেবা ছাড়া) পালন করতে বাধ্য হবো। দাবি পুরণ না হলে পরবর্তীতে কর্মবিরতির পরিধি আরও বৃদ্ধি করা হবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।

আরও খবর

Sponsered content