সারাদেশ

ডেমরা ষ্টাফকোয়ার্টার বিভিন্ন মসজিদে তাবলীগ সা’দপন্থীদের অবস্থান থানায় স্মারক লিপি প্রদান

  প্রতিনিধি ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৪:৫৫:০৪ প্রিন্ট সংস্করণ

মো. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া, ডেমরা,ঢাকা:
প্রশাসনের আন্তরিক সহযোগীতা চেয়ে থানায় স্মারক লিপি প্রদানের পরও ডেমরার ষ্টাফকোয়ার্টার শবগুরজারী মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদে তাবলীগের সা’দপন্থীদের অবস্থান রয়েছ বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে করে এখানকার তাবলীগের জুবায়ের পন্থীরাসহ সাধারণ মুসল্লি, ওলামা-মাশায়েখ, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ও শুরায়ী নেযামের তাবলীগের সাথীরা চরম আতঙ্কে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তারা। এবারও টঙ্গী ইজতেমার মাঠে জুবায়ের পন্থীদের উপর অতর্কিত হামলার আগে সা’দপন্থীরা ষ্টাফকোয়ার্টার শবগুজারী মসজিদে আগের দিন সিলেট ও চট্টগ্রাম থেকে আসা হামলাকারীদের অবস্থান নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিগত ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বরেও তারা একইভাবে হামলার আগে ষ্টাফকোয়ার্টার মসজিদটিতে অবস্থান নিয়েছিল। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ব লতিফ বাওয়ানী জুট মিলের এ মসজিদটিতে দীর্ঘ বেশ কয়েক বছর ধরে অবস্থান নিয়ে সা’দপন্থীরা নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। তাই ওই মসজিদটিসহ ডেমরার সকল মসজিদে তাদের সকল কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানিয়েছেন এখানকার সর্বস্তরের মুসল্লিরা। এবারের হামলার সময় জবাই করে হত্যার চেষ্টা করলেও মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে এসেছেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা গুরুতর আহত ডেমরার মো. শহীদ

এদিকে টঙ্গী ইজতেমার মাঠে সারা বাংলাদেশ থেকে আসা ক্লান্ত,ঘুমন্ত ও নিরস্ত্র সাধারণ মুসল্লিদের ওপর সা’দপন্থীদের অতর্কিত হামলা ও ৪ জন সাথীকে হত্যার প্রতিবাদে রাজধানীর ডেমরায় গত ২০ ডিসেম্বর বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছেন তৌহিদী জনতা। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’র ডেমরা থানা শাখার ব্যানারে ওইদিন বাদ জুম্মা ষ্টাফকোয়ার্টার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এসব কর্মসূচী পালন করা হয়। এতে একযোগে অংশগ্রহন গ্রহন করেন ডেমরা থানাধীন সাধারণ মুসল্লি, ওলামা-মাশায়েখ, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ও শুরায়ী নেযামের তাবলীগের সাথীবৃন্দরা। মুফতি আব্দুল মুকিতের সার্বিক তত্বাবধানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ডেমরা থানা শাখার সভাপতি মো. আনিসুর রহমান কাদেরী ও সাধারণ সম্পাদক মো. লোকমান আমিনের সঞ্চালনায় এসব কর্মসূচী পালন করা হয়। পরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল শেষে তৌহিদী জনতা সা’দপন্থীদের বিরুদ্ধে ৪ দাবি উল্লেখ করে ডেমরা থানায় একটি স্মারক লিপি প্রদান করেন। দাবিগুলো হচ্ছে- খুনি সা’দপন্থীতের গ্রেফতারের মাধ্যমে আইনের আওতায় এনে ফাঁসি দিতে হবে, ডেমরা থানার সকল মসজিদে সা’দপন্থী সন্ত্রীদের সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে, ডেমরার ষ্টাফকোয়ার্টারে অবস্থিত সরকারি লফিত বাওয়ানী জুট মিলের শবগুজারি মসজিদে তাদের সকল কার্যক্রম স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে ও টঙ্গী ইজতেমার মাঠে নৃশংস হত্যাকান্ডে জড়িত ডেমরা থানার সন্ত্রাসীদেরকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

ইজতেমার মাঠে সা’দপন্থীদের আক্রমনে মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে আসা গুরুতর আহত ডেমরার রাজাখালি এলাকার বাসিন্দা মো.শহীদ বলেন, গত ১৮ ডিসেম্বর ভোররাত সাড়ে ৩ টার দিকে সা’দপন্থী সন্ত্রাসীরা আমাকে পাহারারত অবস্থায় ধরে বড় ছুরি দিয়ে জবাই করতে চেষ্টা করেছিল। এ সময় জীবন বাঁচাতে ছুরিটি হাত দিয়ে সরাতে গেলে তারা আমার বুকের উপর ছুরি চালিয়ে রক্তাক্ত জখম করে, পরবর্তীতে আমার ডাত হাতে ছুরিকাঘাতাতের পাশাপাশি পায়ে ও পিঠে রড দিয়ে পিটিয়ে জখম করে। একই সময় তারা আমার সামনেই আরেক মুসল্লিকে জবাই করে নির্মমভাবে হত্যা করে। এ ঘটনায় অন্যান্য মুসুল্লিরা আমাকে উদ্ধার করে পর্যায়ক্রমে দু’টি হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমার জীবন এখনো হুমকির মুখে।
এ বিষয়ে সাধারণ মুসল্লি ও বিক্ষুব্ধরা বলেন, সা’দপন্থীরা মূলত সন্ত্রাসী ও খুনির দল। তারা কখনোই ইসলামের অনুসারী নয়। তারা ইজতেমার মাঠে যে তান্ডব চালিয়েছে এবং আমাদের ৪ জন সাথীকে হত্যা করেছে তা কখনোই মেনে নেবেনা তৌহিদী জনতা। আর ওই খুনিদের ফাঁসি কার্যকর করতেই হবে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। অথচ এখনো সা’দপন্থীরা শবগুজারী মসজিদটিতে প্রতি বৃহস্পতিবার একত্রিত হয়ে তাদের নিয়মিত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে যা খুবই দু:খজনক।
এ বিষয়ে ডেমরা থানার ওসি মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, আমি গত ২০ ডিসেম্বর তৌহিদি জনতার কাছ থেকে স্মারক লিপি গ্রহনের পর উর্ধ্বতনদের অবহিত করে তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন শুরু করেছি। এক্ষেত্রে যে কোন প্রকার সংঘাত এড়াতে খবর পাওয়ার সাথে সাথে সা’দ পন্থীদের ফিরে যেতে বলছি। ধর্মীয় ভাবমূর্তি ঠিক রেখে তাদের অবস্থান থেকে সরে যেতে বলার পর তারাও চলে যাচ্ছে। শবগুজারী মসজিদে পুলিশ পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো তাদের কার্যক্রম বন্ধের জন্য।
উল্লেখ্য: বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষ্যে গত ১৮ ডিসেম্বর ভোর ৩ টার দিকে ইজতেমার মাঠে সারা বাংলাদেশ থেকে আসা মুসল্লি ও ওলামা-মাশায়েখদের সা’দপন্থী সন্ত্রাসী ও খুনিরা দেশিয় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়। এ সময় ৪ জন সাথীকে নির্মমভাবে হত্যা করাসহ কয়েক শতাধিক সাথীকে আহত করেন যারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

আরও খবর

Sponsered content